সম্পদ মানুষের জীবনের অনিবার্য প্রয়োজন। দ্বীনের ওপর চলার জন্য পার্থিব জীবনে অর্থেরও প্রয়োজন আছে। এই প্রয়োজন শুধু আমাদের এখনকার প্রাসঙ্গিকতা নয়; বরং আদিকাল থেকেই মানুষ উপার্জননির্ভর জীবনযাপন করছে।
ইসলাম মানুষের এই প্রয়োজন ও আত্মমর্যাদাকে উপেক্ষা করেনি। হাদিসের ভাষ্য দেখুন, সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বিদায় হজের সময় সেই অসুখে আল্লাহর রাসুল (সা.) আমাকে দেখতে এলেন, যে অসুখে আমি মৃত্যুর মুখে এসে দাঁড়াই। আমি তখন বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমার যন্ত্রণার অবস্থা আপনি দেখেছেন। আর আমি একজন সম্পদশালী মানুষ। আমার একমাত্র মেয়ে ছাড়া কোনো ওয়ারিশ নেই। আমি কি আমার দুই-তৃতীয়াংশ সম্পদ দান করে দেব? রাসুল (সা.) বললেন, না। আমি বললাম, তাহলে কি অর্ধেক সম্পদ দান করে দেব? বললেন, না। এক-তৃতীয়াংশ (দান করে দাও); আর এক-তৃতীয়াংশ অনেক। আর তুমি তোমার ওয়ারিশদের অসহায় এবং মানুষের দুয়ারে ভিক্ষা চেয়ে বেড়াচ্ছে— এ অবস্থায় রেখে যাওয়ার চেয়ে ধনী অবস্থায় রেখে যাওয়া ভালো। (মুসলিম, হাদিস : ১৬২৮; বুখারি, হাদিস : ১২৯৫)
হাদিসটিকে আমরা এ বিষয়ে মূলনীতির মর্যাদা দিতে পারি। এ হাদিসের শিক্ষা হলো, সম্পদ সঞ্চয় করা অবৈধ নয়। সন্তানের জন্য সঞ্চয় করে রেখে যাওয়াকে ইসলামও উৎসাহিত করেছে। উদারপ্রাণে সবকিছু বিলিয়ে দেওয়া, যাতে পরক্ষণেই অন্যের কাছে হাত পাততে হয়— তা কাম্য নয়।
রাসুল (সা.)-ও সম্পদ সঞ্চয় করেছেন বলে আমরা দেখতে পাই। উমর (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে আছে, রাসুল (সা.) বনু নজিরের খেজুর গাছ বিক্রি করে দিতেন, আর পরিবারের জন্য এক বছরের খাদ্য রেখে দিতেন। (বুখারি, হাদিস : ৫৩৫৭)
আমরা রাসুল (সা.)-এর দরবারে বসে আছি। এরই মধ্যে রাখাল তার ছাগলগুলো ছাগলশালার দিকে তাড়িয়ে নিয়ে এলো। আর তার সঙ্গে ছিল একটি ছাগলছানা ম্যাঁ ম্যাঁ করছিল। রাসুল (সা.) রাখালকে ডেকে বললেন, ওহে কী বাচ্চা দিলো? বলল, মেয়ে ছানা। নবীজি (সা.) বললেন, এর জায়গায় আমাদের জন্য একটি ছাগল জবাই করে ফেল। তারপর আমাকে বললেন, তুমি মনে করো না যে— আমরা তোমার জন্য ছাগল জবাই করেছি। আসলে আমাদের ১০০টি ছাগল রয়েছে। আমরা এর সংখ্যা আর বাড়াতে চাই না। তাই আমাদের রাখাল যখন একটি বাচ্চার খবর দেয়, আমরা সেটির জায়গায় একটি ছাগল জবাই করে ফেলি। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ১৪২)
হাদিসটির মাধ্যমে জানা গেল, রাসুল (সা.) পরিবারের জীবিকার জন্য ১০০টি ছাগল পালতেন। সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একজন রাখালও নির্দিষ্ট করা ছিল। সেকালের জীবনমানের হিসেবে হয়ত এতটুকুই যথেষ্ট ছিল। কাজেই আজকের দিনের জীবনমানের বিবেচনায় উপার্জন ও সঞ্চয় করা দোষণীয় কিছু নয়। তবে স্বতঃসিদ্ধ কথা হলো, ইসলাম সম্পদের পাহাড় গড়তে অনুৎসাহিত করেছে। যা কামাই করব তা শুধুই সঞ্চয় করে রেখে দেব আর সম্পদের পাহাড় নির্মাণ করব— এটা ইসলামের দৃষ্টিতে চরম অপছন্দনীয়। কারণ, ইসলামের দৃষ্টিতে দুনিয়ার সঞ্চয়ের চেয়ে আখেরাতের সঞ্চয়টা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই ইসলাম অকৃপণ হাতে খরচ করতে উৎসাহিত করেছে।
নবী-পরিবারের মহান মুখপাত্র উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.)-এর ব্ক্তব্যে পাওয়া যায়, নবী-জীবনের জীবনযাত্রার মান ও জীবিকার রূপ। আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন, অথচ একই দিনে জায়তুনের তেল দিয়ে পেট ভরে দুইবার রুটি খেয়ে যাননি। (মুসলিম, হাদিস : ২৯৭৪)।
নবীজির ক্ষুধা ও অর্থদৈন্যের কথা ফুটে উঠেছে ওমর ফারুক (রা.)-এর বাণীতে। তিনি বলেন, আমি হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে দেখেছি— ক্ষুধায় বাঁকা হয়ে পুরো দিন পার করে দিচ্ছেন। উদরপূর্ণ করার মতো এক টুকরো খেজুরও তার ঘরে ছিল না।