ব্যবস্থাপনা পরিচালক
মুফতি ইব্রাহিম খলিল
মোবাইল নাম্বার : ০১৭১২-৭৭১১৮২

نحمده ونصلي علي رسوله الكريم،

أما بعد!‏

মহান রব্বুল আলামীন আমাদের এবং সকল সৃষ্টিজীবের স্রষ্টা। তিনি আমাদেরকে পৃথিবীতে ‎পাঠিয়েছেন একমাত্র তাঁরই ইবাদতের মাধ্যমে তাঁকে চেনার জন্য। আল্লাহ তাআ‘লা ইরশাদ করেন-

وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونَ

আমার ইবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জ্বীনজাতি সৃষ্টি করেছি। (সুরা যারিয়াত- ৫৬) এই দুনিয়াকে তিনি আমাদের ‎জন্য আখেরাতের ক্ষেত্র বানিয়েছেন। আমরা যদি আমাদের দুনিয়ার জীবনকে আল্লাহর হুকুম ও ‎নবী করীম (স.) এর তরিকায় পরিচালিত করতে পারি, তবেই তা ইবাদত বলে গণ্য হবে এবং তার মাধ্যমে আমরা আখেরাতে সফল হতে পারবো। ইনশাআল্লাহ। বলাবাহুল্য যে, ‎ইবাদত শুধু নামাজ, রোজা, হজ ও যাকাত এই কয়েকটি আমলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং, ‎জীবনের প্রতিটি মূহুর্তে প্রতিটি বিষয়কে আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী চালানোই হচ্ছে ইবাদত। আল্লাহপাক ‎যেমন আমাদের জীবন দান করছেন, তেমনই জীবনপোকরণও সৃষ্টি করেছেন। সেগুলোকে তিনি পবিত্র কুরআন পাকে নেয়ামত, ‎দয়া, অনুগ্রহ প্রভৃতি দ্বারা অভিহিত করেছেন এবং তা উপার্জনের বিধান বর্ণনা করতঃ তার ‎প্রতি মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য ফযিলতও বর্ণনা করেছেন। যা দ্বারা স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে, জীবন প্রবাহের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে রুজি-রোজগার এবং তা ইবাদতও বটে। তাই তো এই বিষয়ে আল্লাহ পাক ও তাঁর নবী মুহাম্মাদ (স.) এর বহু দিক-নির্দেশনা কুরআন-হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহপাক ইরশাদ করেন-

وأحل الله البيع وحرم الربا ‏ ‎

“আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং সূদকে করেছেন হারাম”‎ (সুরা বাকারা ২২৭) নবী করীম (স.) এর বাণী-

عَنْ عَبْدِ اللّٰهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ : «طَلَبُ كَسْبِ الْحَلَالِ فَرِيضَةٌ بَعْدَ الْفَرِيضَةِ». رَوَاهُ الْبَيْهَقِىُّ فِىْ شُعَبِ الْإِيْمَانِ

‘আব্দুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- অন্যান্য ফরয কাজ আদায়ের সাথে হালাল রুজি-রোজগারের ব্যবস্থা গ্রহণ করাও একটি ফরয। (বায়হাক্বী- শু‘আবুল ঈমান- ২৭৮১) অন্যত্র আল্লাহপাক আরো বলেন-

‎ فَاِذَا قُضِیَتِ الصَّلٰوۃُ فَانۡتَشِرُوۡا فِی الۡاَرۡضِ وَ ابۡتَغُوۡا مِنۡ فَضۡلِ اللّٰہِ‎ ‎

অতঃপর যখন সালাত সমাপ্ত হবে তখন তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় আর ‎আল্লাহর অনুগ্রহ হতে অনুসন্ধান কর ‎। (সুরা জুমআহ-১০) উল্লেখ্য যে, এখানে “আল্লাহর অনুগ্রহ” দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, বৈধভাবে জীবনপোকরণের ‎সন্ধানের বেরিয়ে পড়া। অন্যত্র আরো ইরশাদ হচ্ছে-

هُوَ الَّذِي جَعَلَ لَكُمْ الْأَرْضَ ذَلُولًا فَامْشُوا فِي مَنَاكِبِهَا وَكُلُوا مِنْ رِزْقِهِ وَإِلَيْهِ النُّشُورُ

তিনিই তো তোমাদের জন্য যমীনকে সুগম করে দিয়েছেন, কাজেই তোমরা এর পথে-প্রান্তরে বিচরণ কর এবং তাঁর রিযিক থেকে তোমরা আহার কর। আর তাঁর নিকটই পুনরুত্থান। (সুরা মুলক-১৫) এছাড়াও‎ পবিত্র হাদীসে পাকে ব্যবসা ও হালাল উপার্জনের বহু গুরুত্ব ও ফযিলত বর্ণিত হয়েছে। এখানে দু‘একটি উল্লেখ করা হলো। নবী করীম (স.) ‎ইরশাদ করেন-

‎ عن أبي سعيد الخدري رضي الله عنه عن النبي صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قال: “التاجر الصدوق الأمين مع النبيين والصديقين والشهداء”.

বিশ্বস্ত ও সত্যবাদী ব্যবসায়ীগণের হাশর হবে নবীগণ, সিদ্দীকগণ এবং শহীদগণের ‎সাথে। (তিরমীযী) অন্য এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-

عَنِ الْمِقْدَامِ ـ رضى الله عنه ـ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ مَا أَكَلَ أَحَدٌ طَعَامًا قَطُّ خَيْرًا مِنْ أَنْ يَأْكُلَ مِنْ عَمَلِ يَدِهِ، وَإِنَّ نَبِيَّ اللَّهِ دَاوُدَ ـ عَلَيْهِ السَّلاَمُ ـ كَانَ يَأْكُلُ مِنْ عَمَلِ يَدِهِ ‏”‏‏.‏

মিকদাম (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিজ হাতে উপার্জিত জীবিকার খাদ্যের চেয়ে উত্তম খাদ্য কখনো কেউ খায়না। আল্লাহর নবী দাউদ (আলাইহিস সালাম) নিজ হাতে উপার্জন করে খেতেন। (বুখারী ১৯৪২)
কুরআন সুন্নাহের এই গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনার উপর আমল করার উদ্দেশ্যে আমাদের এই ‎ক্ষুদ্র প্রয়াস-
*‎ পারিবারিক ও আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখা এবং সকলকে এক প্লাটফরমে আসার জন্য প্রথমে একটি আর্থিক কল্যাণ ‎ফান্ড গঠন করা। যা ইতিমধ্যে গঠিত হয়ে গেছে। যার মাধ্যমে আল্লাহর ইচ্ছায় সবাই আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী ‎হতে পারবে এবং সবাই মিলে দূর্বল ও অসহায়দের সহায়তায় এগিয়ে আসতে পারবে।* এসব লক্ষকে সামনে রেখে ‘আস-সিদ্দীক ফাউন্ডেশন’ এর উদ্যোগে পরিবারের বিজ্ঞ উলামায়ে কেরাম ও মুরব্বীদের ‎নির্দেশনা এবং পরামর্শে গঠিত হয়েছে “আস-সিদ্দীক পারিবারিক উন্নয়ন ও কল্যাণ সমিতি”‎ (যার নীতিমালা নিম্নে প্রদত্ত হয়েছে) এভাবে আমরা যদি হালাল রুজি কামাইয়ের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হতে পারি এবং ‘খিদমাতে খালক’ এর কাজে এগিয়ে আসতে পারি, ইনশাআল্লাহ তিনি আমাদেরকে অপদস্ত ‎করবেন না। কারণ, ‎ নবী করীম (স.) এর মাঝে মানব সেবার যেই গুণগুলোর কথা বিশেষভাবে উল্লেখ ‎হয়েছে, যার কারণে তাঁর সফলতার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। বুখারী শরীফের শুরুর ‎দিকে বর্ণিত হয়েছে-‎

كَلاَّ وَاللَّهِ مَا يُخْزِيكَ اللَّهُ أَبَدًا، إِنَّكَ لَتَصِلُ الرَّحِمَ، وَتَحْمِلُ الْكَلَّ، وَتَكْسِبُ ‏الْمَعْدُومَ، وَتَقْرِي الضَّيْفَ، وَتُعِينُ عَلَى نَوَائِبِ الْحَقِّ‏.‏

‎ তখন তিনি (নবীজী) খাদীজা (রা.) এর কাছে সকল ঘটনা জানিয়ে তাঁকে ‎বললেন, আমি নিজের উপর আশঙ্কা বোধ করছি। খাদীজা (রা.) বললেন, ‎আল্লাহ্‌র কসম, কক্ষনো না। আল্লাহ্ আপনাকে কক্ষনো অপমানিত করবেন ‎না। আপনিতো আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদ্ব্যবহার করেন, অসহায় দুর্বলের ‎দায়িত্ব বহন করেন, নিঃস্বকে সাহায্য করেন, মেহমানের মেহমানদারী করেন ‎এবং দুর্দশাগ্রস্তকে সাহায্য করেন। নবীজীর উম্মত ও অনুসারী হিসেবে আমাদেরও উচিত মানব সেবায় এগিয়ে ‎আসা। তবেই আমরা আশাকরি ইহ ও পরকালে সফল হতে পারবো। ‎ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দান করুন। আামীন